বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে মিথিলার
সবাই যখন ঘুমিয়ে রাতের আধারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে রাতের পর রাত।
শুরু শুরু রাহিন দাড়াতো পাশে এখন একাই দাড়ায়
মিথিলা।
চার বছর পর মা হতে যাচ্ছে মিথিলা।রাহিনের মা মিথিলা আর রাহিন তিনজনের সংসার।
যারপর নেই খুশি জাহানারা,মিথিলার শাশুড়ি।
এই কয়েক বছর আল্লাহর কাছে একটা বাচ্চার জন্য অনেক ফরিয়াদ করেছেন।
এবার আল্লাহ মুখ তুলেছেন।
বার বার শুকরিয়া আদায় করেন জাহানারা।
মিথিলার মা নেই তাই সব সময় আগলে রাখেন উনি।
চার মাসের প্রেগন্সিতে জটিল এক সমস্যা দেখা দিয়েছে মিথিলার।রাতের পর রাত ঘুমায় না।জেগে থেকে কান্না করে।অজানা আশঙ্কায় জাহানারাও ঘুমাতে পারেন না।
মিথিলা কে ডাক্তার বেড রেস্ট দিয়েছে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকানো যায় না।
মিথিলা ঘুমানোর চেষ্টা করলেও সে ঘুম আধা ঘন্টার
বেশি স্থায়ী হয় না।
অদ্ভুত এক স্বপ্ন প্রতিবার দেখে সে।একটা বিশাল গাছ
আর সে গাছ ভর্তি বিড়াল।প্রতি রাতে বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।বিড়ালগুলো দলে দলে মিথিলার দিকে এগিয়ে আসে।
তখনই ভয়ে চিৎকার করে মিথিলা জেগে যায়।
হুবহু একই স্বপ্ন প্রতিদিন দেখে।
রাতে ঘুম হয় না বলে দিনে তন্দ্রার মতো হয় সেখানে ও একই ব্যাপার ঘটে।
ভয়ে আতঙ্কে চেহারা এতোটুকু হয়ে থাকে।রাহিনের খুব মায়া হয়।
বিজনেস নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকে যে আলাদা করে সময় খুব কম পায় রাহিন।
মিথিলার পছন্দের সব মা করে দেয় জানে রাহিন।
নিজ থেকে কখনও কিছু বলে না মিথিলা।
রাহিনের বাইরে যাওয়ার সময় হলে কেমন করে যেন উঠে যাবে ঘুম থেকে মিথিলা।
চেষ্টা করে রাহিনের টুকটাক কাজ করতে মিথিলা।
বেড রেস্ট দিয়েছে ডাক্তার সেটা কিছুতেই শুনতে চায় না।
জাহানারা মিথিলার সঙ্গে নাস্তা করে দুপুরের জন্য কি করবে বুয়াকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন হঠাত মিথিলার কন্ঠে আর্তনাদ শুনে দৌড়ে এসে ওকে ডাইনিং হলে পরে থাকতে দেখে।
জরিনা আর জাহানারা অনেক কষ্টে মিথিলার ঘরে এনে চোখে মুখে পানি ছিটাতে ও চোখ মেলে তাকিয়ে কান্না শুরু করে।
জাহানারা ঘটনা কিছু ই বুঝতে পারছে না।কি হয়েছে বলবে তো মিথিলা।
একটা বড় সাইজের বিড়াল ওর দিকে এগিয়ে আসছিল দেখে তাই দেখে মাথা ঘুরিয়ে পরে যায়।
জাহানারার দিকে তাকিয়ে ও মিথিলা থরথর করে কাঁপছে।
মিথিলার ব্লিডিং শুরু হয়েছে।
রাহিনকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেন জাহানারা।
মিথিলার ডাক্তার কোনো আশার কথা শুনালেন না।
শূন্য হাতে বাসায় ফিরে আসে মিথিলা।
বাসার তিনজন মানুষ দরকারের অতিরিক্ত যত্ন করছে
মিথিলার।
শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মিথিলা।
খুব ঘুম পায় এতো ঘুম কোথায় ছিলো জানা নেই।
রাত দিন এক করে ঘুমায় মিথিলা।
রাহিন ঘুমন্ত মিথিলাকে অবাক হয়ে দেখে।
পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে কখনও এতো ঘুমাতে দেখেনি।
বাচ্চা হারিয়ে একটু ও কাঁদেনি কেন মেয়েটা কেন জানি।
অনেক দিন পর রাহিন মিথিলা কে এমন আরাম করে ঘুমাতে দেখে খুব মায়া হলো।
মামা মামীর কাছে বড় হয়েছে খুব শান্ত মেয়ে অতিরিক্ত কোনো চাহিদা নেই।
রাহিনের কতো বড় বিজনেস মিথিলার সে ধারনাও নেই।
কেমন জানি ঘোর লাগা ভাব নিয়ে থাকে সব সময় মিথিলা।
বাবা থেকেও কখনও খুঁজ রাখেনি মিথিলার।নতুন সংসার নিয়ে থাকেন।
মিথিলা রাহিনের সঙ্গে নিজের কথা তেমন বলে না।
জাহানারা মিথিলাকে আগেই পছন্দ করে রাহিনকে দেখতে নিয়ে গিয়েছিলেন।মা পছন্দ করেছেন বলে আর তেমন কিছু জানতে চায়নি।নজর কারা সুন্দরী পছন্দ না হওয়ার ও কথা না।
বিয়র পর অস্বাভাবিক কিছু বুঝা যায়নি
নতুন যায়গায় ঘুম হচ্ছে না বলে তেমন মাথা ঘামায়নি
রাহিন।
রাতের পর রাত ঘুমাতে পারে না মিথিলা এটা বুজতে
বেশ কয়েকদিন লেগে যায়।বিজনেসের কাজে খুব ব্যস্ত
থাকে হয়তো দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে ভাবে।
ডাক্তার এক গাদা ঔষধ দেয়,খেয়ে ও রাতে ঘুমায় না।
দিনে পরে পরে ঘুমায় মিথিলা।
জাহানারা বিষয়টা তেমন আমলে না নিলেও দিন দিন
সমস্যা আরো বড় হতে লাগলো।
বিড়াল দেখলে ভয় পায় তাই দেখে রাহিন হেসে বাঁচে না।
হঠাত আতকে উঠে রহিনকে ভয়ে জড়িয়ে ধরলে বরং খুশি হয় রাহিন।
কিন্তু সত্যি কতোটুকু ভয় পায় বুঝতে সময় লেগেছে অনেক।
জাহানারা বাসায় ছিলো না সেদিন জরিনা কিচেনে ছিলো রাহিনে ওর বেডরুমে ছিলো।মিথিলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গাছে পানি দিচ্ছিলো কোথা থেকে এক কালো বিড়াল এসে ঘুরঘুর করছিল ওর পায়ের কাছে।ভয়ে নীল হয়ে মিথিলা রাহিনকে ডাকছে কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিলো না।
হাত থেকে মগ পরে যাওয়ার শব্দ পেয়ে রাহিন বের হয়ে
মিথিলাকে এই অবস্থায় পায়।
চেহারা পুরো নীল হয়ে আছে হা করে দম নিচ্ছে মিথিলা।
রাহিন মিথিলাকে ঘরে নিয়ে অনেক বুঝালো একটা বিড়াল কিছু করতে পারে না।
মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক বুঝালো।
এর পর আরো ঘুম কমে গেলো।
জাহানারা মায়ের চেয়ে ও বেশি আগলে রাখে মিথিলাকে।
ডাক্তারের পরামর্শ মতো সব করেন।
মিথিলা বাচ্চাদের মতো কান্না করে ঘুমের জন্য রাতের পর রাত।
জরিনা হাত বুলিয়ে দেয় মাথায়,ওর বাড়ির গল্প করে।
রাহিনের ঘুম পায় কতো রাত বসে থাকবে ওর বিজনেস
দেখতে হয়।আর রাতে ঘুম আসবে এটাই স্বাভাবিক।
রাহিনের সমস্যা হয় বলে বসার ঘরে জরিনার মাথায় তেল দিয়ে দেয়।
ওর গ্রামের কথা শুনায়।মন দিয়ে শুনে মিথিলা।
জরিনা মিথিলার বিয়র আগের কথা শুনতে চায়।
মিথিলা খুব বিরক্ত হয়ে ওঠে যায়,ঘর জুড়ে পায়চারি
করে।
ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে রাহিনের পাশে শুয়ে থাকে।
রাহিন পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে মিথিলাকে।
মিথিলার দম বন্ধ হয়ে আসে ও আবার উঠে বসে।
বাচ্চা হারানোর কষ্ট তিলতিল করে অনুভব করে।দুচোখে বেয়ে পানি পরে রাহিন দেখতে পায় না।
থখন সে গভীর ঘুমে থাকে।
মিথিলা রাহিনকে দেখে গভীর মনোযোগ দিয়ে।
ভাবে রাহিন মা ওর কতো যন্ত্রণা সহ্য করছে নিজকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়।
এতো ভালো একটা পরিবারের বউ হতে পেরেছে।অথচ
কখনো এতটুকু বিরক্ত হয় না মিথিলার প্রতি ওর এই সমস্যার জন্য।
মিথিলার মামা এসেছে ওর খবর পেয়ে।জাহানারা
আজকে অবশ্যই জানতে চাইবে কেন এমন করে মেয়েটা।এই সমস্যা কি আগেও ছিলো মিথিলার?
আগামী পর্বে সমাপ্ত